ঢাকা ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিকেল সেল সম্পর্কে যা জানা জরুরি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • ১২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ১৯ জুন রবিবার বিশ্ব সিকেল সেল(কাস্তে-কোষ ব্যাধি) দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এ দিবসটি পালন করা হয়। ‘সিকেল সেল’ একটি রক্তাল্পতাজনিত জিনগত রোগ। বংশ পরম্পরায় এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের সচেতনতার লক্ষ্যে ১৯ জুন বিশ্ব ‘সিকেল সেল’ দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীজুড়ে বহু মানুষ মারা যান এই রোগে। একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

২০০৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভা ১৯ জুন’কে বিশ্ব সিকেল সেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস উদযাপনের মধ্যে দিয়ে সিকেল সেল রোগ এবং তার চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। ২০০৯ সালে প্রথম সিকেল সেল দিবস উদযাপন করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞ মতানুসারে, যদি দেখা যায় মা অথবা বাবা এই রোগের জিন বহন করছে তবে তাদের সন্তানের এই রোগ হবে না। তবে সন্তান জিনটির বাহক হয়ে থাকবে। আবার বাবা ও মা উভয়েই যদি এই জিনের বাহক হন তবে তাদের সন্তানের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই দিনে সবাইকে এ বিষয়ে রক্ত পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করা হয় ।

সিকেল সেল রোগের কারণ

এটি একটি বংশগত হিমোগ্লোবিন-বিকার ঘটিত ব্যাধি যার প্রধান উপসর্গ রক্তাল্পতা। রোগটি সিকেল সেল অ্যানিমিয়া নামে বেশি পরিচিত। এত রোগে রক্তের লোহিত রক্ত কোষগুলো কাস্তে আকৃতির দেখায় বলে এই নাম। এই লোহিত কণিকাগুলো অনমনীয় বলে প্লীহার ছাঁকনিতে আটকা পড়ে যায় ও তাড়াতাড়ি বিনষ্ট হয়। তাই এতে যে সরাসরি রক্তাল্পতা হয় তা রক্তনাশক বা হিমোলাইটিক ধরনের রক্তাল্পতা (তবে নিচে দেখুন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াও এই রোগের ক্রাইসিস দশায় কখনো কখনো হতে পারে)।

সিকেল সেল রোগ

সিকেল সেল রোগ বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার একপ্রকার জিনগত অস্বাভাবিকতা, যার ফলে এই কোষগুলো অর্ধচন্দ্র বা কাস্তের মত হয়ে যায়।

এই অস্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকাগুলি অনমনীয় এবং আঠালো হয়ে যায়, রক্তনালীতে আটকে যায়, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।

এই রোগের কারণে লোহিত রক্ত কণিকার জীবদ্দশা হ্রাস পায়, ফলস্বরূপ অ্যানিমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন মানুষ।

সিকেল সেল বা কাস্তে ব্যাধির লক্ষণ

কাস্তে কোষ ব্যাধিতে রক্তাল্পতা (হিমোলাইটিক ক্রাইসিস) ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের কারণও লোহিত কোষগুলোর অনমনীয়তা। এর ফলে ছোট রক্তবাহগুলো মাঝে মধ্যে জ্যাম হয়ে যায়। ফলে সাময়িক রক্ত সরোবরাহের অভাবে স্থানীয় কলা-মৃত্যু ঘটতে পারে এবং এর ফলে নানা অঙ্গে ভয়ঙ্কর ব্যথা (পেইনফুল ক্রাইসিস) ও গোলযোগ দেখা দেয়। তাতে প্লীহার কিছু অংশ মরে শুকিয়ে ঝরে যেতে পারে, বুকে ব্যাথা হতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, শিশ্নেপ্রায়াপিজম, অস্থি মজ্জায় রক্ত উৎপাদনের অভাব (অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা অবর্ধক রক্তশূণ্যতা), সাল্মোনেলা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা অস্টিওমায়েলাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। গুরুতর অ্যানিমিয়া, ব্যাথা, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, গুরুতর সংক্রমণ, স্ট্রোক, মাথা ব্যাথা, গাঁটে ব্যাথা এবং হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা।

এ রোগ সম্পর্কে আরো জানুন

বিশ্বের জনসংখ্যার অন্তত পাঁচ শতাংশ জিনগত কারণে হিমোগ্লোবিন সংক্রান্ত রোগ বহন করে, তার মধ্যে বেশিরভাগটাই সিকেল সেল রোগ এবং থ্যালাসেমিয়া।

বংশগত কারণে হিমোগ্লোবিনের এই অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, এক্ষেত্রে বাবা এবং মা উভয়ের দিক থেকে এই জিন আসে।

হিমোগ্লোবিনের রোগ নিয়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৩০০,০০০ জন শিশু জন্ম গ্রহণ করছে।

নির্দিষ্ট ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে সারা পৃথিবীব্যাপী হিমোগ্লোবিন সংক্রান্ত রোগের সমস্যা কমানো যেতে পারে।

সিকেল সেল অ্যানিমিয়া একধরনের বংশগত রোগ, সংক্রামক নয়।

আফ্রিকা এবং এশিয়ার মধ্যে এটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিকেল সেল সম্পর্কে যা জানা জরুরি

আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ১৯ জুন রবিবার বিশ্ব সিকেল সেল(কাস্তে-কোষ ব্যাধি) দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এ দিবসটি পালন করা হয়। ‘সিকেল সেল’ একটি রক্তাল্পতাজনিত জিনগত রোগ। বংশ পরম্পরায় এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের সচেতনতার লক্ষ্যে ১৯ জুন বিশ্ব ‘সিকেল সেল’ দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীজুড়ে বহু মানুষ মারা যান এই রোগে। একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

২০০৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভা ১৯ জুন’কে বিশ্ব সিকেল সেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস উদযাপনের মধ্যে দিয়ে সিকেল সেল রোগ এবং তার চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। ২০০৯ সালে প্রথম সিকেল সেল দিবস উদযাপন করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞ মতানুসারে, যদি দেখা যায় মা অথবা বাবা এই রোগের জিন বহন করছে তবে তাদের সন্তানের এই রোগ হবে না। তবে সন্তান জিনটির বাহক হয়ে থাকবে। আবার বাবা ও মা উভয়েই যদি এই জিনের বাহক হন তবে তাদের সন্তানের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই দিনে সবাইকে এ বিষয়ে রক্ত পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করা হয় ।

সিকেল সেল রোগের কারণ

এটি একটি বংশগত হিমোগ্লোবিন-বিকার ঘটিত ব্যাধি যার প্রধান উপসর্গ রক্তাল্পতা। রোগটি সিকেল সেল অ্যানিমিয়া নামে বেশি পরিচিত। এত রোগে রক্তের লোহিত রক্ত কোষগুলো কাস্তে আকৃতির দেখায় বলে এই নাম। এই লোহিত কণিকাগুলো অনমনীয় বলে প্লীহার ছাঁকনিতে আটকা পড়ে যায় ও তাড়াতাড়ি বিনষ্ট হয়। তাই এতে যে সরাসরি রক্তাল্পতা হয় তা রক্তনাশক বা হিমোলাইটিক ধরনের রক্তাল্পতা (তবে নিচে দেখুন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াও এই রোগের ক্রাইসিস দশায় কখনো কখনো হতে পারে)।

সিকেল সেল রোগ

সিকেল সেল রোগ বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার একপ্রকার জিনগত অস্বাভাবিকতা, যার ফলে এই কোষগুলো অর্ধচন্দ্র বা কাস্তের মত হয়ে যায়।

এই অস্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকাগুলি অনমনীয় এবং আঠালো হয়ে যায়, রক্তনালীতে আটকে যায়, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।

এই রোগের কারণে লোহিত রক্ত কণিকার জীবদ্দশা হ্রাস পায়, ফলস্বরূপ অ্যানিমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন মানুষ।

সিকেল সেল বা কাস্তে ব্যাধির লক্ষণ

কাস্তে কোষ ব্যাধিতে রক্তাল্পতা (হিমোলাইটিক ক্রাইসিস) ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের কারণও লোহিত কোষগুলোর অনমনীয়তা। এর ফলে ছোট রক্তবাহগুলো মাঝে মধ্যে জ্যাম হয়ে যায়। ফলে সাময়িক রক্ত সরোবরাহের অভাবে স্থানীয় কলা-মৃত্যু ঘটতে পারে এবং এর ফলে নানা অঙ্গে ভয়ঙ্কর ব্যথা (পেইনফুল ক্রাইসিস) ও গোলযোগ দেখা দেয়। তাতে প্লীহার কিছু অংশ মরে শুকিয়ে ঝরে যেতে পারে, বুকে ব্যাথা হতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, শিশ্নেপ্রায়াপিজম, অস্থি মজ্জায় রক্ত উৎপাদনের অভাব (অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা অবর্ধক রক্তশূণ্যতা), সাল্মোনেলা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা অস্টিওমায়েলাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। গুরুতর অ্যানিমিয়া, ব্যাথা, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, গুরুতর সংক্রমণ, স্ট্রোক, মাথা ব্যাথা, গাঁটে ব্যাথা এবং হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা।

এ রোগ সম্পর্কে আরো জানুন

বিশ্বের জনসংখ্যার অন্তত পাঁচ শতাংশ জিনগত কারণে হিমোগ্লোবিন সংক্রান্ত রোগ বহন করে, তার মধ্যে বেশিরভাগটাই সিকেল সেল রোগ এবং থ্যালাসেমিয়া।

বংশগত কারণে হিমোগ্লোবিনের এই অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, এক্ষেত্রে বাবা এবং মা উভয়ের দিক থেকে এই জিন আসে।

হিমোগ্লোবিনের রোগ নিয়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৩০০,০০০ জন শিশু জন্ম গ্রহণ করছে।

নির্দিষ্ট ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে সারা পৃথিবীব্যাপী হিমোগ্লোবিন সংক্রান্ত রোগের সমস্যা কমানো যেতে পারে।

সিকেল সেল অ্যানিমিয়া একধরনের বংশগত রোগ, সংক্রামক নয়।

আফ্রিকা এবং এশিয়ার মধ্যে এটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা।